
আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, রান্না করতে হবে, খেতেও হবে। বিশেষ করে লকডাউন পরবর্তী পৃথিবী আমাদের দেখিয়ে দিয়ে গেল যে নিজের রান্নার দায়িত্ব নিজের কাঁধে রাখার অভ্যেসটা সবার থাকা উচিত! ক্ষেত্র বিশেষে তা দাম্পত্যের ফাটল জোড়া দেওয়ার কাজেও আসতে পারে। পরিচালক সত্রাজিৎ সেন লকডাউনে ঘরবন্দি থেকেই এমন একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি বানিয়ে ফেলেছেন যেখানে খাবার আর করোনা মিলেমিশে গিয়েছে ফ্যান্টাসির সৌজন্যে।
‘গ্রাব নে বনা দি জোড়ি’ নামক ছবিটির কেন্দ্রে আছেন ‘সময়’ -- হ্যাঁ, মহাভারতের সময় চরিত্রের মতোই তিনি আক্ষরিক অর্থেই সময় বা টাইম। মীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছেন এই চরিত্রে। তাঁর সহকারী হিসেবে আছেন 'ফুডকা', বা স্বনামধন্য ফুড ব্লগার ইন্দ্রজিৎ লাহিড়ি। আর প্যারিস, কানাডা, ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড নিবাসী চার দম্পতি আছেন -- তাঁরাই এ ছবির মূল পাত্র-পাত্রী। আছে লগ্নজিতা চক্রবর্তীর গাওয়া চমৎকার একটি গান। কাহিনিকার সম্রাট মুখোপাধ্যায়, ছবি এডিট করেছেন আদিত্য সেনগুপ্ত।

সত্রাজিৎ যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র মীর অভিনেতা। ইন্দ্রজিতেরও নিয়মিত ক্যামেরার মুখোমুখি দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু বাকি যে দম্পতিরা এ ছবিতে কাজ করেছেন, তাঁরা কেউই অভিনেতা নন। পরিচালক বলছেন, “এঁরা সবাই আমার পরিচিত। অনেক ক্ষেত্রেই এঁদের বাচ্চারা ছবিটা শ্যুট করে দিয়েছে। যাঁদের সন্তান খুব ছোটো, তাঁরা সেলফি মোডে ক্যামেরা রেখে শ্যুট করে পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে আমফান এসেছে, কলকাতা লন্ডভণ্ড হওয়ার পাশাপাশি আমাদের প্রচুর ভিডিয়ো উড়ে গিয়েছে। আমরা আবার সে সব আনিয়েছি, ইন্টারনেট ছিল না – তার মধ্যে কাজ শেষ করে ছবিটি আপলোড করা সম্ভব হল মে মাসের 30 তারিখ। আমি এ ছবিটা স্টার নয়, সাধারণ মানুষকে নিয়েই বানাতে চেয়েছিলাম। এ পর্যন্ত যা সাড়া পেয়েছি, তাতেও আমি খুশি।’’
ছবিটায় অনেকগুলি মেসেজ দিয়েছেন পরিচালক। রান্না করাটা একটা শিল্প তো বটেই, কিন্তু পরিবারের সবাই মিলে রান্না করার একটা আলাদা মজা আছে। খাবার খেতে ভালো হোক বা না হোক, একসঙ্গে সময় কাটানোর এমন সুযোগ হাতছাড়া করাটা ঠিক নয়! পরিবারের কাজে কোনও নারী-পুরুষ ভেদও হয় না -- সবার সব কিছু করা উচিত। বাঙালির যতটুকু রাজনীতি ছাড়া চলে না, আছে ঠিক সেটুকুও। এ গুলো কি খুব সচেতনভাবেই রেখেছেন ছবিতে? “হ্যাঁ বলতে পারেন। কারণ লকডাউনের শুরুতে যখন সবাই রান্নাবান্না করে সোশাল মিডিয়ায় ছবি দিচ্ছিলেন, তখন তা নিয়ে নানা ঝগড়াঝাটি পর্যন্ত হতে দেখেছি। সেটাও মাথায় ছিল।”
সত্রাজিৎ নিজে চিত্রনির্মাতা-প্রযোজক হওয়ার পাশাপাশি চলচ্চিত্র অনুরাগী এবং এই শিল্পের মনোযোগী ছাত্রও বটে। কী মনে হয়, আগামীদিনে সিনেমার ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে? “এখনই কিছু বলার মতো সময় আসেনি। ব্যাপারটা আপনাকে তিনদিক দিয়ে ভেবে দেখতে হবে। এক নম্বরে থাকবেন দর্শক। যাঁরা টিকিট কেটে হলে যেতেন, তাঁরা আগের মতো অতটা স্বচ্ছন্দে হলমুখো হবেন না। বরং একটা স্মার্ট টিভি কিনে বাড়িতে ছবি দেখতে স্বচ্ছন্দ বোধ করবেন, অন্তত কিছুদিন। দুই, নির্মাতা হিসেবে আমার ধারণা, সব ছবি হলে গিয়ে দেখার মতোও নয়, ফ্যামিলি ড্রামা ঘরে বসেও দেখা যায়। তিন, সিরিয়ালের কাজ হয়তো কিছুদিনের মধ্যে শুরু করা সম্ভব হবে। কিন্তু যতজন নিয়ে শ্যুটিং শুরু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা দিয়ে ফিল্মের শ্যুট কীভাবে করা সম্ভব, তা নিয়ে আমার নিজেরই সন্দেহ আছে। তা ছাড়া গিল্ডের কিছু নিয়মকানুন আছে, তার সঙ্গেও তাল মেলাতে হবে। সব মিলিয়ে আপাতত এগিয়ে থাকবে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। সেখানেই বেশি কনটেন্ট তৈরি হবে, দর্শক দেখবেনও।”
মন্তব্য