করোনা ভাইরাসের দাপট সবাইকেই ঘর বন্দি থাকতে বাধ্য করেছে। এই লেখা যখন গড়ে উঠতে আরম্ভ করেছে, তখনও কলকাতা শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা একশো বিশ ঘণ্টা পেরিয়েও ঘন অন্ধকারে ডুবে, গ্রামবাংলার কথা তো এখানে বসে চিন্তা করাও সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে চোখের সামনে স্পষ্ট হচ্ছে অর্থনীতির বেহাল দশা। চাকরির বাজার খারাপ, ব্যবসায় ঘোর মন্দা। ওদিকে আবার উত্তরাখণ্ডের জঙ্গলে লেগেছে জোর দাবানল। শুকনো বাতাসে দাউদাউ ছড়াচ্ছে আগুন, বিস্তীর্ণ বনভূমি পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিম ভারতে ধেয়ে আসছে পঙ্গপালের ঝাঁক -- মাঠের ফসল ফোঁপরা করে তবেই বিদায় নিচ্ছে তারা। এক কথায়, এ বছরটা যেন আমাদের পরীক্ষা নিচ্ছে -- একটার পর একটা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে বারবার। তবে খারাপ সময়ে দাঁড়িয়ে একটা কথা খুব জোর দিয়ে বলা যায় -- সুদিন আসতে আর বেশি দেরি নেই।
আমফান আমাদের খুব জরুরি কতগুলো বিষয় শিখিয়ে দিয়ে গেল। আমরা বুঝতে পারলাম যে প্রতিকূলতার সঙ্গে না লড়ে, খুব আরামের জীবন কাটিয়ে আমাদের অভ্যেসটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে। জীবনের ছোটো ছোটো আনন্দগুলিকে আমরা উপভোগ করতে ভুলে গিয়েছি। সেই সঙ্গে ভুলেছি বিপদে মাথা ঠান্ডা রাখতেও। অন্তত 15 দিন আগে থেকে আমাদের কাছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস ছিল, কিন্তু আমরা তাতে পাত্তা দিইনি। ভেবেছি, ঝড় এবারও ঠিক চলে যাবে বাংলাদেশ, ওড়িশা বা অন্ধ্রের দিকে। এতটা আত্মবিশ্বাসের কোনও কারণ নেই। প্রকৃতির রুদ্ররূপের সামনে মানুষ বরাবর অসহায়।
যাঁদের বাড়িতে অসুস্থ রুগি আছে, ইনসুলিনের মতো প্রাণদায়ী ওষুধ লাগে, তাঁরা আগে থেকে সাবধান হোন। অতি ভারী বর্ষণ, ঝড় বা ভূমিকম্প হলে বিদ্যুতের অভাব হতেই পারে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবেই পাওয়ার গ্রিড অচল করে দেওয়া হয়। সেই অবস্থায় ওষুধ বাঁচানোর জন্য অবশ্যই আইসবক্স রাখুন কাছে। আর রাখুন মোমবাতি, শুকনো খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা। যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আভাস পেলেই গ্রাম-শহর নির্বিশেষে এটুকু আয়োজন করে রাখা উচিত। গ্রামের দিকে যাঁরা পাকা বাড়িতে থাকেন, তাঁদের কাছে এসেই আশ্রয় নেন সহায় সম্বলহীনরা। জল আর খাবার প্রত্যেকের কাজে লাগে। বাড়ির রিজার্ভার ভরে জল তুলে রাখতে হবে। ভরে রাখুন সব বালতি ও গামলা এবং বেশি জল খরচ করা চলবে না।
দুর্যোগ ধেয়ে আসার আগের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগান। চার্জ দিয়ে রাখুন সব ইলেকট্রনিক ডিভাইসে, অফিসে আগে থেকে জানিয়ে রাখুন আবহাওয়ার পূর্বাভাস। বলে দিন, পরিস্থিতি খারাপ হলে হয়তো আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে না। কাজ সেরে রাখুন আগে থেকে। দুর্যোগ না এলে সমস্যা নেই -- এলেও যেন বাড়তি টেনশন না হয়। যাঁদের মা-বাবা বা শ্বশুর-শাশুড়ি দূরে থাকেন, তাঁরা ওষুধপত্র বা নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাঠিয়ে দিন সময় থাকতেই। কারও উপর তাঁদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দিয়ে রাখতে পারলেও ভালো হয়। ফোন, ব্যাটারি চার্জ করে রাখার কথা বার বার বলে দিন।
ঝড় থেমে গেলেই বাড়ির বাইরে পা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না একেবারেই। আশপাশে জল জমে থাকলে তো কোনও মতেই না -- বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে কিন্তু! প্রশাসনের নির্দেশের অপেক্ষায় থাকুন। বিপর্যয় মোকাবিলার প্রথম ধাপটা আপনাকে নিজেকেই করতে হবে। এমন ব্যবস্থা রাখুন যাতে বাড়ির বাইরে পা না দিয়ে অন্তত দিন দুয়েক চলা যায়।
এমন হতেই পারে যে এত সাবধানতার কিছুই কাজে লাগল না -- কিন্তু তাও প্রতিবার কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘোষণা হলেই এই ব্যবস্থাগুলি করতে হবে। খেয়াল রাখবেন, সাবধানের যেমন মার নেই, তেমনই মারের সাবধান নেই!
ফোটো সৌজন্য: ইনস্টাগ্রাম
মন্তব্য